আমার বাবা। বাবা। baba

আমার বাবা

-শওকতুর রহমান

বাবার শরীলের ঘ্রানটা আজও নাকে লেগে আছে,
সুমিষ্ট সেই ঘ্রানটা এখন আর পাইনা খুঁজে;
কত বছর হয় বাবা তোমায় দেখিনা, 
কত কষ্টে কাঁটছে জীবন কেউ জানেনা। 

মনেপড়ে শুক্রবার এলে মুখে সাবান মেখে দাঁড়িয়ে থাকতাম দাঁড়ি গোফ শেভ করব বলে,
শেভ করে তুমি ব্লেডটা কিভাবে যেন খুলে ফেলতে কথার ছলে।
গোসল করে পরিপাটি হয়ে তুমার পিছন পিছন জুম্মার নামাজে,
নামাজ শেষ করে একসাথে ফিরতাম কখনও কোলে কখনোবা হেঁটে।
পথে দাদার কবরের সামনে এসে থমকে যেতে তুমি, অশ্রুশিক্ত নয়নে নিজ মা বাবার জন্য করতে ক্ষমা প্রার্থনা।
ছোট্ট মনে একটাই প্রশ্ন উঁকি দিত, 
দাদা মরে গেছেন শুনেছি সেই কবে আজও কান্না কর কেন তুমি?
আজ জীবনের এই প্রান্তে এসে পেয়েছি খুঁজে সেই প্রশ্নের  উত্তর।
আমার কারনে তোমার কৃষি করাটা হলনা,
সকালে মক্তব ছুটি হতে দেরী মাঠে যেতে আমাকে ঠেকায় কে?
তোমার সাথে জমির পাশে বসে সকালের ঐ নাশতা করাটা,
আমার কাছে মনে হত এক অমৃত স্বাদ। 

বাঁশের তৈরী ঐ মইয়ে উঠে বসতাম চড়ে, 
মনে হতো যেন গরুর গাড়িতে করে ঘুড়ে বেড়াচ্ছি আমি। একদিন কাজের লোকটার পাওয়া বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় করে দিলে, কৃষি আর করবেনা বলে। 
মায়ের কাছে জানতে পারলাম এসব করেছো আমার জন্য, 
এভাবে চলতে থাকলে আমার পড়ালেখা হবে না আর। কত স্বপ্ন দেখেছিলে বাবা আমাকে নিয়ে বড় বড় স্বপ্ন, আমি কিছুই তার করতে পারিনি পুরণ। 

খেতের রাস্তা ধরে দিয়ে তুমি সামনে হেঁটে যেতে,
 আমি ঠিক তোমার পিছন পিছন অনুসরণ করে। 
মাঝে মাঝে গুণ গুণ করে গাইতে তোমার প্রিয় গান, খাইয়ো না খাইয়ো না লংকার বাঘ খাইয়ো না আমারে, 
গান শুনে অনেক চিন্তা হত বাবা সত্যি সত্যি যদি বাঘ তোমাকে খেয়ে ফেলে?
একদিন সেই বাঘ এসে তোমাকে খেয়েই ফেলল,
আমি অসহায়ের মত শুধু তোমার মুখখানা দেখছিলাম চেয়ে চেয়ে।
আমার জীবনের সবকিছু হারিয়েছি সেই দিন,
সেদিন থেকে আমি বড় একেলা হয়ে গেছি বাবা। 
কত বাবাই তো দেখলাম তাদের দায়িত্ব দেখলাম সন্তানের প্রতি,
তোমার মত আর কাউকে দেখিনি যে জীবনের সব স্বাদ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছে সন্তানের জন্য।

Comments

Popular posts from this blog

কবিতা প্রিয় স্বদেশ ফেরা- ভালবাসার বাংলাদেশ

আয়না- কবিতা আয়না

মাহে রামাদ্বান/ এসেছে রামজান/Ramadan